সার্ক এ প্রথম নারী আনসার ব্যাটালিয়ন, ৮১৬ জন সদস্য** সদর দফতরে সফলতা দেখাচ্ছে ২৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ** এসএসএফ এ নারী আনসারে সফলতা
এ কে আজাদ১৩ মার্চ, ২০১৮ ইং ০০:০০ মিঃ
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দেশের সর্ববৃহত্ শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় ৩০ লাখ নারী এই বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে বাহিনীর কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন। যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি দৃষ্টান্ত। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনসার ও ভিডিপি’ই প্রথম নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ এ বাহিনীতে পরিচালক থেকে মাঠপর্যায়ের সকল স্তরে নারী সদস্যরা সফলতার চিহ্ন রাখছেন। বাহিনীর ৮১৬ জন সশস্ত্র নারী আনসার সদস্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফেও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন নারী আনসার সদস্যরা। যোগ্যতা আর দক্ষতার বলে নারী আনসার সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যাব ও ডিজিএফআই’র স্পর্শকাতর ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করছেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে মহিলা ভিডিপি প্লাটুন গঠনের মাধ্যমে বাহিনীতে নারী সদস্য যুক্ত করা হয়। কালক্রমে সশস্ত্র মহিলা ব্যাটালিয়ন আনসারও নিযুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালে গঠিত হয় এই উপমহাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন। ২০০৮ সালে আরো একটি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়। মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন দুইটি সার্ক অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম পেশাদার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যাটালিয়ন। আজ এ বাহিনীর প্রায় প্রতিটি স্তরে নারীরা যোগ্যতার বলে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে নিয়েছেন। দেশের প্রত্যেক গ্রামে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট একটি করে ভিডিপি মহিলা প্লাটুন রয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক গ্রামে একজন গ্রাম দলনেত্রী এবং প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন ইউনিয়ন দলনেত্রী ও সহকারী ইউনিয়ন দলনেত্রী রয়েছেন।
বর্তমানে ৩৮টি পুরুষ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন অত্যন্ত সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ দুটি ব্যাটালিয়নে প্রায় সাড়ে আটশ মহিলা সদস্য বাহিনীর বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। বিসিএস (আনসার) ক্যাডারের মাধ্যমে এ বাহিনীর নারী কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন ইউনিট ও দপ্তর কমান্ড করছেন। বর্তমান এ বাহিনীতে ৩১ জন বিসিএস (আনসার) মহিলা কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন পরিচালক, ৮ জন উপ-পরিচালক এবং ১৬ সহকারী পরিচালক রয়েছেন। ওইসব কর্মকর্তাদের মধ্য ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৫ জন এবং ১ জন ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক। এছাড়া রয়েছেন ১ জন নারী সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট, ৪৯২ জন উপজেলা প্রশিক্ষিকা, ৬৭২ জন মহিলা আনসার, ১৪০ জন মহিলা ব্যান্ডম্যান, ৬০০ জন অঙ্গীভূত মহিলা আনসার, ২৫৯৮ জন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় ওয়ার্ড দলনেত্রী, ৪৩২৪ জন ইউনিয়ন দলনেত্রী। এর বাইরে বাহিনীতে লাইব্রেরিয়ান, হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়কসহ বিভিন্ন পদে নারী সদস্য কর্মরত রয়েছেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে গুরুপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে সদর দফতের পরিচালক (সিএইচটি-অপসঃ) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফাতেমা সুলতানা, উপ-পরিচালক (যোগাযোগ) কামরুন নাহার, সিলেট রেঞ্জের উপ-পরিচালক সারোয়ার জাহান চৌধুরী, উপ-পরিচালক (কেপিআই) জাহানারা আক্তার, উপ-পরিচালক তাসকিন আরা, উপ-পরিচালক (অস্ত্র চালনা-প্রশিক্ষক) সালমা সিদ্দিকা, উপ-পরিচালক (কর্মকর্তা-প্রশিক্ষণ) মুন মুন সুলতানা, ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক রোকসানা বেগম, ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ফাতেমা-তুজ-জোহরা, জেলা কমান্ড্যান্ট শিরিন সুলতানা, ৩৩ আনসার ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক তানজিনা বিনেত এরশাদ, উপ-অধিনায়ক ফারজানা আক্তার ডালিয়া, মোস্তারী জাহান ফেরদৌস, উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়ক (চলতি দায়িত্ব) নাদিরা ইয়াসমিন, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট মির্জা সিফাত-ই-খোদা, অধিনায়ক (চলতি দায়িত্ব) মেহেনাজ তাবাস্সুম রেবিন, সহকারী পরিচালক (ব্যাটালিয়ন-রেকর্ড) হোসনে আরা হাসি, ৩১ আনসার ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (চলতি দায়িত্ব) মোরশেদা খানম, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট (ভিডিপি) মোছলিমা আক্তার, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট (টিডিপি) তামিমা সুলতানা, সহকারী পরিচালক কানিজ ফারজানা শান্তা, সহকারী পরিচালক (ডুকুমেন্টেশন) ফারজানা রহমান সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি’র পক্ষ থেকে ১৭টি বিষয়ের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণ ও রণকৌশল শিখিয়ে আনসার-ভিডিপি মহিলা ইউনিট গঠন করা হয়। প্রশিক্ষিত আনসার-ভিডিপি মহিলা সদস্যরা সেলাই মেশিন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ, উন্নত মানের চাষাবাদ পদ্ধতি, ইলেকট্রিক, কম্পিউটার, বুটিক, নকশিকাঁথা তৈরি, বাঁশ ও বেতের কাজসহ নানা কাজে প্রশিক্ষিত করা হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপি নারী সদস্যদের অবদান উল্লেখযোগ্য। এ বাহিনীতে ১৭টি মহিলা ক্রীড়া দল রয়েছে। আনসার বাহিনীর নারী দল ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছে। গত এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে স্বর্ণপদক অর্জন করেন বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি’র খেলোয়াড় মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। অপর দিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মহিলা ব্যান্ড দল তৈরি করেছে আনসার বাহিনী। এ বাহিনীর মহিলা অর্কেস্ট্রা শিল্পীদের নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনা বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। এ বাহিনীর মহিলা শিল্পীরা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বাহিনীর সুনাম বৃদ্ধি করছেন। এ বাহিনী কাঙ্গালিনী সুফিয়া, চন্দনা মজুমদার, অনিমা মুক্তি গমেজ, শাহনাজ বেলী, শাহনাজ জামান এবং শেফালী সারগামের মতো দেশ বরেণ্য নারীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সারাদেশে